করোনা ভাইরাস দ্বিতীয় পর্যায় সংক্রমণ - যেভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন

আমাদের সবার মনেই অজানা আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছে এই বুঝি কোভিড-19 সংক্রমনের দ্বিতীয় ধাক্কা পুরোপুরি আঘাত হানলো। আমরা কি যথেষ্ট সাবধানতার সাথে এর দ্বিতীয় জোয়ার আলিঙ্গন করতে সত্যিই প্রস্তুত আছি? ইতিহাস আমাদেরকে এটা সাবধান করে দেয় যে মহামারীর দ্বিতীয় স্তর প্রথমের তুলনায় যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ধরা দেয়।

ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস এর দ্বিতীয় তরঙ্গ আঘাত হেনেছে। মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু আমরা জানি অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের স্বাস্থ্য সেবা, তথ্য প্রযুক্তি, এবং সবার জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিত করণে অনেকটাই পিছিয়ে আছি। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের মত মহামারী মোকাবেলায় আমরা কতটা প্রস্তুত? আমাদের চিকিৎসক-নার্স, স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় পর্যায়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কি যথেষ্ট? আসলে আমাদের যেসব প্রস্তুতি আছে তার সঙ্গে প্রত্যেকের সচেতনতা এবং স্বাস্থ্য নির্দেশিকা গুলো মেনে চলার মাধ্যমেই আমরা এই সংক্রমণের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। ‌

করোনাভাইরাস এর আক্রমণে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। যতটা সম্ভব ঘরে থাকা, ঘরে বাইরে গেলে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করা, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই হাত পা ধোয়া ইত্যাদি। কিন্তু এবারের দ্বিতীয় ধাক্কা অবশ্যই প্রথম বারের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। নিজেদের সচেতনতা এবং স্বাস্থ নির্দেশিকা গুলো মেনে চলতে হবে সেই সাথে অন্যদেরকেও প্রলুব্ধ করতে হবে। এগুলো উপেক্ষা করলে সংক্রমণ বেড়ে যাবে এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
করোনাভাইরাস এর ধারাবাহিকতা এবং সম্ভাব্য উত্থানের জন্য নিজেকে এবং আপনার প্রিয়জনদের প্রস্তুত করতে আপনাকে আরো কয়েকটি কাজ করা উচিত।

মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন:
করোনাভাইরাস এর প্রথম আক্রমণে আমরা‌ অপ্রস্তুত ছিলাম। অন্যান্য দেশে এই মহামারী দেখা দিলেও আমরা সচেতন হই নি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি। কিন্তু এর দ্বিতীয় তরঙ্গ মোকাবেলায় আমরা অনেকটাই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারি। কেননা আমরা অনেক কিছু শিখেছি এবং জেনেছি কিভাবে এই মহামারী থেকে নিজেদেরকে এবং প্রিয়জনকে সুরক্ষিত রাখা যায়। স্বাস্থ সুরক্ষিত রাখার নির্দেশিকা গুলো উপেক্ষা করে নয় বরং এ ব্যাপারে আরো বেশি সচেতন হতে হবে এবং অন্যদেরকেও প্রলুব্ধ করতে হবে।

অনলাইন শিক্ষা অথবা হোমস্কুলিং এর জন্য প্রস্তুতি নিন:
করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসা ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস নেওয়া পরীক্ষা সংগঠিত করা সম্ভব করেছে। কিন্তু বেশ কিছু স্কুল কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাস এর আওতায় আসতে না পেরে ঝরে গেছে। এক্ষেত্রে নিজেদের বাচ্চাদেরকে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া, পরীক্ষা সংগঠিত করা এবং অন্যান্য কাজগুলো সমাধা করতে অভ্যস্ত হতে হবে। এছাড়া বাবা-মা কেও বাচ্চাদেরকে হোম স্কুলিং করতে হবে। তাদেরকে সময় দিতে হবে এবং পড়াশোনার যত্ন নিতে হবে। এ সময় অলস ভাবে বাড়িতে ফেলে রাখলে পড়াশোনার এবং শিক্ষার মান ব্যাহত হবে।

বাড়িতে বসে কাজ করার ব্যবস্থা করতে হবে:
মহামারীর আগে কর্মরত প্রায় অর্ধেক লোক এখন বাড়ি থেকে কাজ করছেন। অনেক নিয়োগকর্তা অর্থ সাশ্রয় করতে এবং তাদের কর্মীদের সুস্থ রাখতে সহায়তা করার জন্য এই রূপান্তর স্থায়ী করার বিষয় বিবেচনা করছেন। বাসায় বসে দক্ষতার সাথে কাজ করতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যদি আপনার কাছে থাকে তবে আরো বেশি উৎপাদনশীল কাজ করা সম্ভব হবে।

জরুরী তহবিল তৈরি করুন:
আপনার সঞ্চয়ে আরো বেশি অর্থের প্রয়োজন। কোভিড মহামারীটি অনিশ্চিত সময় ধরে চলতে থাকবে। আপনার চাকরি চলে যেতে পারে অথবা জরুরী কোন মেডিকেল সেবার প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য আপনার সঞ্চয় বাড়াতে হবে। অহেতুক অতিরিক্ত খরচ গুলো একেবারেই বন্ধ করে দিতে হবে।

আরো বেশি স্বাবলম্বী হতে হবে:
করোনাভাইরাস এর প্রথম জোয়ারে বাজার, শপিং সেন্টার, অনলাইন সার্ভিস সবকিছুতেই হাহাকার চলছিল। তাই দ্বিতীয় ধাক্কা সামলানোর জন্য নিজেদেরকে স্বাবলম্বী হতে হবে। আমরা বাড়িতে ছোটখাটো গার্ডেনিং করতে পারি। খালি জায়গা গুলোতে শাকসবজি, ফলমূলের চারা লাগাতে পারি। কম খরচে, নিজের পরিবারের জন্য ভেজাল মুক্ত খাবার মজুদ রাখতে এটা সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে।

প্রাথমিক চিকিৎসার কিট তৈরি করতে হবে:
আমাদের প্রত্যেকের ঘরে প্রাথমিক চিকিৎসার কিট তৈরি করতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতি পরিচালনা করার জন্য প্রস্তুত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। বাড়িতে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাথে যেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায় সেজন্য সরঞ্জামগুলো প্রস্তুত রাখুন এবং সেগুলোর ব্যবহার জেনে নিন। প্রয়োজনীয় ওষুধ আছে কিনা নিশ্চিত করুন।

নিয়মিত অনুশীলন করুন:
আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং অবসাদ, কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত অনুশীলন করুন। বাড়িতে বসেই ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ সহ বেশ কিছু শারীরিক এবং মানসিক ব্যায়ামের অনুষ্ঠান করুন। ‌স্বাস্থ্যকর এবং তাজা খাবার খান এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার পুরোপুরি বর্জন করুন।

করোনা ভাইরাসের প্রথম ধাক্কা পুরোপুরি যায়নি। এখনো সবাই আক্রান্ত হচ্ছি এবং ঝুঁকির মধ্যে আছি। ‌ তারপরও আমাদের জীবনযাত্রা অনেকটাই আগের মত হয়ে গেছে। আমরা কেউ সচেতনতা এবং সুরক্ষার বিষয়ে ভাবতে চাইনা। শপিং সেন্টার, সামাজিক অনুষ্ঠান এসব জায়গাগুলোতে ভিড় জমে এবং দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, হ্যান্ড গ্লাভস পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা থেকে আবারও পিছিয়ে পড়ছি। এই অবস্থার মধ্যে দ্বিতীয় জোয়ার শুরু হতে যাচ্ছে। এই জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং আরো বেশি সচেতন হওয়া এবং মহামারী নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য অনস্বীকার্য।

home_top