ব্রেস্টফিডিং : অপর্যাপ্ততা ভীতি ও সমাধান

শামা মাত্র তিন দিন আগেই ফুটফুটে একটা মেয়েবাবুর জন্ম দিয়েছে। প্রসব পরবর্তি ধকল সামলে কিছুটা ধাতস্থ হতেই নতুন দুর্ভাবনা মাথায় জাকিয়ে বসেছে। তার বাবুটি ঠিকঠাক মতোন খাবার পাচ্ছে তো? এই লেখাটি সে-ই সব নতুন মায়েদের জন্য, যারা শামার মতো তাদের নবজাতকের প্রয়োজনীয়/যথেষ্ট দুধপান নিয়ে চিন্তিত।

কিভাবে বুঝবেন আপনার নবজাতক যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে :

আপনার শিশুটি খেয়ে তৃপ্ত হচ্ছে কি না তা নিচে উল্লেখিত কয়েকটি লক্ষন মিলিয়ে নিয়ে বুঝতে পারেন।

পাঁচ থেকে সাত দিন বয়সের একটি শিশু স্বাভাবিক ভাবে দিনে তিন থেকে চার বার মলত্যাগ করবে। বয়স দুই থেকে তিন মাস হলে একবার এমনকি একদিন পরপর মলত্যাগ করলেও ধরে নেয়া যায় শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে।

জন্মের প্রথম মাসে অন্তত ছয়বার প্রস্রাবে ভেজা ডায়াপার পরিবর্তন করা লাগে এবং প্রস্রাবের রং যদি বর্ণহীন হয় বা এমনকি হালকা হলুদ বর্ণের হলেও বুঝে নেবেন আপনার শিশু যথেষ্ট হাইড্রেটেড এবং সে তার প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছে।

নার্সিং এর পর যদি শিশুটি উৎফুল্ল থাকে তাহলে বুঝতে পারবেন আপনার শিশু খেয়ে তৃপ্ত।

সঠিক হারে ওজন বৃদ্ধি শিশুর পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ প্রাপ্তির লক্ষন।

বুকে দুধের সরবরাহে ঘাটতির সম্ভাব্য কারণ :

মা এর বুকের দুধের উৎপাদন ও সরবরাহ মূলত সাপ্লাই এ্যান্ড ডিমান্ড সাইকেল দ্বারা প্রভাবিত হয়। অর্থাৎ, একজন মা সুস্থ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ততখানিই দুধের যোগান দিতে পারেন যতটা তার শিশুর চাহিদা। দীর্ঘ বিরতিতে স্তন্যপান করালে (বলা হয়ে থাকে, চার ঘন্টার বেশি সময় পরে) বুকে দুধ সরবরাহে ঘাটতি হয়ে থাকে। অনেক সময় নতুন মায়েরা একটু লম্বা সময় নিয়ে নবজাতক কে খাওয়াতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না এবং নার্সিং সেশনগুলো সংক্ষিপ্ত করেন। এটা আপনার শিশুকে পুষ্টিকর দুধ পেতে বাধাগ্রস্ত করবে এবং সেই সাথে মায়ের বুকের দুধের পর্যাপ্ত উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। প্যাসিফায়ার ব্যাবহারকারী কোন কোন শিশু এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবার ফলে, নির্দিষ্ট সময় পরপর স্তন্য পানে অনাগ্রহ দেখায়। এতে করে, চাহিদা কম থাকায় মায়ের বুকে দুধের সরবরাহ ও কমে যেতে পারে।

মা এর বুকে দুধের সরবরাহ বাড়ানোর টিপস্ :

আপনার শিশুকে স্তন্যপান করানোর পজিশনটি সঠিক কিনা নিশ্চিত করুন।

শিশুকে খাওয়ানোর সময় তাড়াহুড়ো করবেন। অনেকে বারবার ঘড়ি দেখেন। এটা না করে বরং তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন সে কতক্ষণ খাবে। সময় হলে শিশু নিজেই খাওয়া থামিয়ে দেবে।

স্তন্যপানের সময় পাশ পরিবর্তন করে উভয় স্তন থেকেই খাওয়াতে হবে।

অসুস্থতা বা অপারগতা না থাকলে ফর্মুলা বা কৌটার দুধে অভ্যস্ত করা যাবে না। এতে শিশুর মায়ের দুধের প্রতি নির্ভরতা কমে যাবে ফলে মায়ের বুকে দুধের উৎপাদন ও হ্রাস পাবে।

প্যাসিফায়ার এ অভ্যস্ত না করানোই ভালো।

মা কে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে এবং প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, কুমড়ো খাওয়া বুকের দুধের সরবরাহ বৃদ্ধির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। এছাড়া প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সামুদ্রিক মাছ, মৌরি, মেথি, কালোজিরা ইত্যাদি বুকে দুধের সরবরাহ বৃদ্ধি ঘটায়। সে-ই সাথে ফল-মূল ও প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। প্রথমবার মা হওয়া অনেককেই দেখা যায় বুকের দুধের পর্যাপ্ততা নিয়ে উদ্বেগে থাকতে। মনে রাখবেন আপনি একা নন। একজন মা সবসময়ই তার সর্বোচ্চ চেষ্টা টি করে থাকেন। আত্মবিশ্বাস রাখুন প্রয়োজনে কেয়ার গিভার বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।